20.6 C
New York
রবিবার, আগস্ট ১০, ২০২৫

Buy now

spot_img

হুমায়ূন আহমেদের মজার ঘটনা

হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন একজন চূড়ান্ত ধরণের রসিক মানুষ। তার লেখার মাধ্যমে আজও তিনি সমান জনপ্রিয়। জীবনের স্বাভাবিক এবং সাধারণ সব ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে লুকিয়ে থাকা রসবোধটা তিনি বের করে আনতে পারতেন অনায়াসেই। কিছু হুমায়ূন আহমেদের নিজের বর্ণনায় কিছু অন্যের বর্ননায়, স্টার বক্স তুলে ধরছে তার জীবনের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মজার ঘটনা।

ঘটনা ১

সিলেটের মীরাবাজারে গাছগাছালি ঘেরা এক রহস্যময় বাড়িতে কেটেছে হ‌ুমায়ূন আহমেদের শৈশব। বাল্যবন্ধু শংকরকে নিয়ে লেখকের কয়েকটা গল্প আছে। ছেলেবেলায় শংকর ছিল তার ছায়াসঙ্গীর মতো। শৈশবে পড়াশোনা নিয়ে তাদের কোনো চিন্তা ছিল না। কিন্তু বন্ধু শংকরের মা ঘোষণা দিলেন শংকর যদি ক্লাস থ্রি পাস করে ফোরে উঠতে পারে তবে সে পাবে চামড়া ফুটবল। চামড়ার ফুটবলের ভীষণ শখ তাদের। ফুটবলের লোভে শংকরকে নিয়ে পড়তে বসল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র হুমায়ূন। একই ক্লাসে পড়লেও তখন সে শিক্ষক আর শংকর ছাত্র। অন্যকে পড়াতে হলে আগে তো নিজেকে পড়তে হবে। জোরেসোরে চললো লেখাপড়া আর শংকরকে পড়া বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা। ফল বের হলো, দেখা গেল লেখক প্রথম হলেও শংকর পাস করতে পারেনি। সেবার পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়েও ফুটবল না পাওয়ার দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরেছিল ছোট্ট হুমায়ূন। পরে অবশ্য শংকরকেও প্রমোশন দেওয়া হয় এবং শংকরের মায়ের কিনে দেয়া এক নম্বরি ফুটবল দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘গ্রীনবয়েজ ফুটবল ক্লাব’।

ঘটনা ২

তখন পড়ি ক্লাস এইটে। চিটাগাং কলেজিয়েট স্কুল। বাংলা স্যার বললেন, রচনা লিখে আনো। প্রিয় ঋতু। চার-পাঁচটা কোটেশন যেন থাকে। প্রতিটা বানান ভুলের জন্য পাঁচবার কানে ধরে উঠবোস। ডিকশনারি সামনে নিয়ে রচনা লিখবি। আমরা রচনা লিখলাম। স্যার আমার রচনা পড়ে রাগী গলায় বললেন, কী লিখেছিস ছাগলের মতো! বর্ষা প্রিয় ঋতু? লিখবি ঋতুরাজ বসন্ত। তাহলে না নাম্বার পাবি। ফুলের সৌরভ, পাখির কূজন। বর্ষায় ফুল ফোটে না। পাখিও ডাকে না। আমি বললাম, স্যার, বর্ষাই আমার প্রিয়। আপনার প্রিয় আপনার মধ্যে থাক। নাম্বার বেশি পেতে হবে না।

ঘটনা ৩

হুমায়ূন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। হঠাৎ এক ছাত্র প্রশ্ন করলো, ‘স্যার, আপনি নাকি গরুর কথাও বুঝতে পারেন?’ হুমায়ুন আহমেদের ‘ছেলেবেলা’ বইটি পড়ে হয়তো এমন ধারণা হয়েছিলো ছাত্রটির। ক্লাসের মাঝখানে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় চলে আসায় হুমায়ুন আহমেদ বিরক্ত হলেন। বললেন, ‘হ্যাঁ, পারি। নইলে তোমাদের ক্লাস নিচ্ছি কীভাবে?’

ঘটনা ৪

এক সাংবাদিক টেলিফোনে হুমায়ূন আহমেদের কাছে তার অবসর সময় কীভাবে কাটে জানতে চাইলেন। উত্তরে হুমায়ুন আহমেদ বললেন, ‘অবসর সময়ে আমি একটা কাঁচি নিয়ে বসি। কাঁচি দিয়ে কেটে সময় কাটাই!’

ঘটনা ৫

গভীর রাতে হুমায়ূন আহমেদকে এক বিখ্যাত অভিনেতা ফোন করল। এত রাতে ফোন পেয়ে তিনি কিছুটা বিরক্ত। অভিনেতা ফোন দিয়ে বললেন, হুমায়ূন ভাই আমার অবস্থা খুব খারাপ।

হুমায়ন আহমেদ বললেন, কেন কী হয়েছে? অভিনেতা বললেন, পেটে প্রচুর গ্যাস হয়েছে।

হুমায়ূন আহমেদ আরও বিরক্ত হয়ে বললেন, পেটে গ্যাস হয়েছে তো আমাকে কেন? তিতাস গ্যাসকে ফোন দেন।

ঘটনা ৬

হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজ হার্ট অ্যাটাক করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি। একদিন হুমায়ূন আহমেদ দেখতে এলেন। সঙ্গে ডাক্তার-নার্সরাও রয়েছে। মাকে দেখে হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘আম্মা এবার সিগারেটটা ছাড়েন।’

সবাই হেসে উঠলো। একজন নার্স  হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই আহসান হাবীবকে বললেন, ‘আপনার মা সিগারেট খান?’

আহসান হাবীব হেসে উত্তর দেন, ‘না। সিগারেট খেলে হার্ট অ্যাটাক হয় এমন ধারণা আছে আমাদের। তাই রসিকতা করেছে।’

ঘটনা ৭

আশির দশকের মাঝামাঝি তখন। হুমায়ূন আহমেদ শহীদুল্লাহ হলের হাউস টিউটর হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। নিয়ম মতো হল-প্রভোস্টের সঙ্গে আবেদনকারীর একটি সাক্ষাৎকার দিতে হয়। হুমায়ূন আহমেদ সেখানে গেলেন। সঙ্গে ছিলেন হুমায়ুন আজাদ। কোথায় কী করতে হবে এ সব ব্যাপারে তাকে তখন হুমায়ুন আজাদই সাহায্য করছিলেন।

প্রভোস্ট হুমায়ূন আহমেদকে অনেক প্রশ্ন করেছেন। অনেক কিছু বলেছেন। হুমায়ূন আহমেদ কিছু বলেননি। শেষে প্রভোস্ট তার বক্তব্য শুনতে চাইলে হুমায়ূন আহমেদ অম্লান বদনে বলে দিলেন, ‘আপনাকে আমার এখন পেটাতে ইচ্ছা করছে।’ প্রভোস্টের অবস্থা তো বুঝতেই পারছেন।

এত কিছুর পরও কিন্তু হাউস টিউটরের চাকরিটা হুমায়ূন আহমেদ পেয়েছিলেন।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,500SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles