22.1 C
New York
সোমবার, আগস্ট ১১, ২০২৫

Buy now

spot_img

খান আতাউর রহমান

খান আতাউর রহমান একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্রাভিনেতা, সুরকার, গায়ক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার, প্রযোজক, সংলাপ রচয়িতা, কাহিনীকার। অসংখ্য চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন, তার মধ্যে ‘জীবন থেকে নেয়া’ (১৯৭০) উল্ল্যেখযোগ্য।এই ছবিতে তার গাওয়া গান “এ খাঁচা ভাঙ্গব আমি কেমন করে”, বাঙ্গালি জাতিকে মানসিক শক্তি যুগিয়েছিল পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে। তার জন্মস্থান মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামে। তিনি খান আতা নামে বহুল পরিচিত।

খান আতার বাবার নাম ছিল জিয়ারত হোসাইন খান এবং মায়ের নাম ছিল জোহরা খাতুন। তার মা তাকে আদর করে ডাকতেন “তারা”, তার মায়ের পরিবার ছিলেন মাজারের খাদিম তথা তত্ত্বাবধায়ক। ধর্মীয় উরসে তার মামা নানারকম আধ্যাত্মিক সংগীত পরিবেশন করতেন। ১৯৩৭ সালে ঢাকা জিলা সংগীত প্রতিযোগীতায় খান আতা ‘মন পবনের ডিঙ্গা বাইয়া’ গান গেয়ে প্রথম স্থান দখল করেন।তিনি তখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র।

খান আতা ১৯৪৪ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশান পরীক্ষা পাশ করেন। ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষা দেন ঢাকা কলেজ থেকে। এরপর ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজ এ। ১৯৪৬ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এসময় তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের উদ্দেশ্যে পকেটে মাত্র ৬০ টাকা নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালাবার চেষ্টা করেন।কিন্তু ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনে তিনি তার এক দুলাভাই এর চোখে পড়ে গেলে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু অল্প কিছুদিন পরেই মেডিকেল ছেড়ে চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়এ ভর্তি হন। এবারো তার বোহেমিয়ান স্বভাবের কারণে তিনি সেখানে থাকলেন না।এ বছরেই তিনি লন্ডনে ফটোগ্রাফি বিষয়ক একটি বৃত্তি লাভ করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তিনি সেখানে যাননি।১৯৪৯ সালে আবার তিনি বাড়ি ছেড়ে পালাবার চেষ্টা করেন। এবারো উদ্দেশ্য ছিল একই। এবার তিনি প্রথমে মুম্বাই যান। মুম্বাই গিয়ে তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছেন, চলচ্চিত্র জগতের আনাচে কানাচে গিয়েছেন। এসময় তিনি জ্যোতি স্টুডিওর ক্যামেরাম্যান জাল ইরানির সাথে পরিচিত হন।জাল ইরানি তাকে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেন।কিন্তু আতা সাহেব এ কাজে পরিতুষ্ট হতে পারেননি।

১৯৫০ সালের জানুয়ারিতে চলে আসেন করাচি। করাচী এসে তিনি যোগ দেন রেডিও পাকিস্তান এ সংবা্দপাঠক হিসেবে। এখানেই আরেকজন প্রতিভাবান বাঙ্গালী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ফতেহ লোহানীর সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে।তখনো চলচিত্রের ব্যাপারে তার উৎসাহ কমেনি। যার কারনে তিনি প্রায় ই লাহোর যেতেন। এসময় তিনি সারঙ্গী বাদক জওহারি খানের কাছ থেকে তালিম নেয়া শুরু করেন। ফতেহ্‌ লোহানী কিছুদিন পরে লন্ডন চলে গেলে ১৯৫২ সালে খান আতা একটি পোল্যান্ডীয় জাহাজে করে লন্ডন পাড়ি জমান। সেখানে অনেক বাঙ্গালী অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহণ করেন গায়ক এবং অভিনেতা হিসেবে। এখানে এস এম সুলতানের সাথে তার সাক্ষাত হয়। এস এম সুলতানের চিত্রকর্মের উপকরণ যোগানে সাহায্য করেন তিনি। খানা আতা এবং তার সাথীরা এস এম সুলতানের চিত্রকর্মের প্রদর্শনী এবং বিক্রয়ের ব্যাবস্থা করেন। লন্ডনের সিটি লিটারেরি ইন্সটিটিউটে তিনি থিয়েটার ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হন। পরের বছরেই তিনি ইউনেস্কো বৃত্তি নিয়ে নেদারল্যান্ডে চলে যান। ১৯৫৫ সালে আবার লন্ডনে ফিরে এসে শিক্ষকতা করেন। এসময় তিনি কিছুদিন বিবিসি এর সাথেও কাজ করেছেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন ।

১৯৫৬সালে পাকিস্তানি পরিচালক এ. জে. কাদের পরিচালিত ছবি “জাগো হুয়া সাভেরা” তে মূল ভূমিকাতে অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র জীবনের সূত্রপাত হয়।এ ছবির সহকারী পরিচালক ছিলেন জহির রায়হান। চলচ্চিত্র জগতে তিনি ‘আনিস’ নাম টি ব্যবহার করতেন।তার অভিনীত প্রথম বাংলা ছবি “এদেশ তোমার আমার” মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালে। এহতেশামের এই চলচ্চিত্র ‘এ দেশ তোমার আমার’ এ তিনি সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬০ সালে জহির রায়হানের সাথে গড়ে তোলেন লিটল সিনে সার্কেল। এর পরের বছরগুলোতে জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় তার। অভিনেতা এবং সংগীত পরিচালক হিসেবে তিনি কাজ করেছেন কখনো আসেনি, যে নদী মরুপথে, সোনার কাজলের মতো সফল চলচ্চিত্রে।

১৯৬৩ সালে “অনেক দিনের চেনা” ছবির মাধ্যমে তিনি তার পরিচালনার ক্যারিয়ার শুরু করেন। এর পর একে একে নবাব সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৭), সাত ভাই চম্পা (১৯৬৮), অরুণ বরুণ কিরনমালা (১৯৬৮), আবার তোরা মানুষ হ (১৯৭৩), সুজন সখী (১৯৭৬), এখনো অনেক রাত (১৯৯৭) এর মত ছবি দর্শকদের উপহার দেন।

সূর্যস্নান ছবিতে ১৯৬২ তে তিনি উপহার দেন ‘পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া রে’ এরমতো গান। কন্ঠ দেন কলিম শরাফি। ১৯৬৩ সালে জহির রায়হানের ‘কাঁচের দেয়াল’ ছবিতে তিনি নিয়ে আসেন ‘শ্যামল বরণ মেয়েটি’ শীর্ষক একটি জনপ্রিয় গান। ‘সূর্যস্নান’ ছবির গীতিকার হিসেবে এবং ‘কাঁচের দেয়াল’ ছবির সংগীত পরিচালক হিসেবেপাকিস্তান ফিল্ম ফেস্টিভাল এ ১৯৬৫ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া সংগীত পরিচালক ছিলেন বাহানা, সাগার, আখেরি স্টেশান, মালা প্রভৃতি উর্দু ছবিতে। ১৯৬৯ সালে জহির রায়হানের পরিচালনায় জীবন থেকে নেয়াতে অভিনয় করেন। এই ছবিতে তিনি ” এ খাচা ভাঙ্গবো আমি কেমন করে ” শীর্ষক গানের কথা লিখেন এবংনিজেই কন্ঠ দেন। ১৯৭১ এর মুক্তি যুদ্ধে দেশাত্মবোধক গান লিখেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য এবং চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহে সাহায্য করেন।৭০’ এবং ৮০’র দশকে উপহার দেন সাবিনা ইয়াসমীনের কন্ঠে এ কি সোনার আলোয়, শহনাজ রহমতুল্লাহের কন্ঠে এক নদী রক্ত পেরিয়ে এর মতো গান।

ব্যক্তিগত জীবনে খান আতাউর রহমান তিন বার বিয়ে করেন।লন্ডনে থাকাকালীন সময়ে তিনি শার্লি নামক এক ইংরেজ মেয়ের সাথে পরিচিত হন এবং তাকে বিয়ে করেন।বাংলাদেশে আসার পর তাদের একটি সন্তান হওয়ার পরে খান আতা এবং শার্লির মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় এবং শার্লি সন্তান নিয়ে লন্ডনে ফিরে যান।এরপর খান আতা মাহবুবা হাসনাত কে বিয়ে করেন।একটা বেতার কেন্দ্রে তাদের পরিচয় হয়েছিল।তাদের একটি মেয়ে হয়। মেয়ের নাম রুমানা ইসলাম।১৯৬৮ সালে খান আতা বাংলাদেশের প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী নিলুফার ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন।খান-আতা এবং নিলুফারের ছেলে আগুন বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় সঙ্গীতশিল্পী।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,500SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles