22.1 C
New York
সোমবার, আগস্ট ১১, ২০২৫

Buy now

spot_img

আমার সব পাওয়া হয়ে গেছে : নচিকেতা

শিল্পী নচিকেতা । বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরার  তাগিদে নচিকেতার গানের জগতে আসা। গান গাইতে গাইতে নিজের সীমাবদ্ধতা, হতাশা আর  বেকারত্বকে জয় করেছেন। গানে গানে স্বপ্ন দেখিয়েছেন সমাজকে। বলে

গেছেন সমাজ পরিবর্তনের কথা।  কিছু দিন আগে তিনি লস এঞ্জেলসে এসে ছিলেন বাংলাদেশ মেলা গান গাইতে। এল এ বাংলাটাইমস এর দর্শকদের জন্য তার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এলএ বাংলাটাইমস এর আব্দুস সামাদ।

কেমন লাগল এবার লস এঞ্জেলেস এসে?

গতানুগতিক এই প্রশ্নের জবাব দিলেন একবাক্যে,

ভালো তো লাগবেই, যেখানে বাঙালি,

সেখানে আবেগ। কথায় কথায় আরও জানান, এই

সীমান্ত, এই কাঁটাতার ভালো লাগে না।

বাংলাদেশে গিয়ে ছিলেন, সেখানের কিছু কথা বলুন?

বাংলাদেশে এসে আমি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গান করেছিলাম। যেদিন ফিরে যাব, তার আগের রাতে ছিলাম সোনারগাঁও হোটেলে। সকালে ফ্লাইট। আগের রাতে অন্তত হাজারখানেক তরুণ-তরুণী হোটেলের

বারান্দায় ভিড় করেছিল। সারা রাত ওরা ছিল। আমি মাঝেমধ্যে নেমে ওদের সঙ্গে আড্ডা মেরেছি। বিড়ি ফুঁকেছি। গালগপ্পে অন্যরকম  সেই রাতটা কেটেছে। এবার গাইলাম তারকা হোটেলে। দেখলাম আমার গান শুনে ওরা খুব মজা করছে। মনে হলো, অনেক কিছু নিচ্ছে গান থেকে, শিক্ষা-দীক্ষা…। আমি গান শেষ করলাম। শুরু হলো ডি জে। ওমা, যারা আমার গান শুনেছে, তারাই দেখি ওই উন্মাদনায় হাফপ্যান্ট পরে নাচা শুরু করল! এটা খুবই হুমকির কথা।

এটা তো আকাশ সংস্কৃতির যুগ?

আমি মানতে রাজি নই। ফ্রান্সে কি এমন হয়?

একটা ভালো বই পড়ে কিংবা ছবি দেখে ওরা কি

ব্রোথেলে চলে যায়? না। ভারতবর্ষে

কিন্তু এখন এই ভয়ংকর কাণ্ডগুলো ঘটছে।

জানতে চাই গানের জগতে আসার ইতিহাস?

নিতান্তই জীবিকার তাড়নায়। অন্য কিছু করার ছিল না।

সামান্য বিএ পাস ছেলে আমি। এমএ পড়তে পারিনি,

কেননা হঠাৎ করেই বাবা মারা গেলেন।

সংসারের হাল ধরতে হবে। জীবিকার

প্রয়োজনে একজন শ্রমিক হাতুড়ি কিনে, একজন

রাজনীতিবিদ মিথ্যে কিনে। আমার কাছে গান ছাড়া

আর কিছু নেই।

নেই নাকি আপনিই নেননি?

দেখুন, আমার জীবনের একটা সময় স্ট্রাগল

করে কেটেছে। সব মধ্যবিত্ত পরিবারেই

একটা নিয়ম প্রচলিত ছিল, চাকরি করো, গানটান হবে

না। তো ওই সময়টাই গানের পোকাটা আমার মাথায়

ঢুকেছিল। আত্মীয়স্বজন কী কাজে

লাগে, এটা বোঝেন তো? ঘরের বেকার

ছেলের জ্বালা আরও হাজার গুণ বাড়াতে চাইলে

বাড়িতে আত্মীয়স্বজন ডেকে আনবেন।

তারা ছেলে কী করে, গান করে, পাগল

হয়ে গেল বলে জ্বালা আরও বাড়িয়ে

দেবে। তো একসময় এমন দশা কেটেছে

আমার। গান করি বলে সবাই করুণার চোখে তাকাত।

ভাবখানা রবিঠাকুরের গানের মতো, ‘অন্ধকানাই

পথের ধারে/ গান শুনিয়ে ভিক্ষে করে।’

গান শিখেছেন কার কাছে?

অনেকের কাছে গান শিখেছি। রেডিওর

কাছে সবচেয়ে বেশি শিখেছি। আমার

মায়ের কাছে শিখেছি বেশ কিছুদিন।

এ ধরনের গান অর্থাৎ জীবনমুখী

গানটাকেই বা বেছে নিলেন কেন?

জীবনমুখী গানের অনুপ্রেরণা

আসলে এই সিস্টেমের কাছে পেয়েছি।

যেখানে আমি বড় হয়েছি, বুড়ো হচ্ছি। আমার

কাছে একসময় মনে হয়েছিল, প্রেমট্রেম

নিয়ে অনেক গান হলো। এবার যে সময়ে

দাঁড়িয়ে আছি, সে সময় নিয়ে মাটিতে দাঁড়িয়ে

আছি। সেই সময়ের মাটির জন্য গান করতে

হবে। সময়ই আমাকে এ ধরনের গান

শিখিয়েছে।

জীবনমুখী শব্দটা নিয়ে কিন্তু অনেক

সমালোচনাও হয়েছে। অন্য গানগুলো কি

তাহলে…

আমি নিজেই নিজের গানকে এমন বলেছি।

অবশ্য আমার চেয়ে বেশি বলেছে, আমার

শ্রোতারা। আচ্ছা ভাই, আমার গান আমার সন্তান। আমি

আমার সন্তানের নাম যা ইচ্ছা রাখব। এতে কার

বাপের কী? এখন যদি আমার ছেলের নাম

সুমন রাখি, তাহলে কি আরেকজন বলবে, ‘বাহ্,

আমার ছেলের নাম তাহলে দুশমন! বলবে?’

নীলাঞ্জনা নিয়ে কিছু বলবেন? সত্যিই কি

আপনার প্রথম প্রেম…?

না, নীলাঞ্জনা নিয়ে আমি কখনো

কোনো কথা বলিনি। আজও বলব না। রহস্যটা আমি

কখনোই প্রকাশ করব না।

আর পৌলমি?

হুম, একটা ভাঙা সংসারের কথা বলেছি। অর্থনৈতিক

স্বাচ্ছন্দ্য যে একটি সম্পর্কের জন্য ভীষণ

রকম দরকার, একটা সময়ে হাড়ে হাড়ে টের

পেয়েছিলাম।

অনির্বাণ কে? গানে বলেছিলেন আপনার

ছেলেবেলার বন্ধু।

এটা একটা পলিটিক্যাল ক্যারেক্টার। নির্দিষ্ট কেউ

না। আমি একটা সময় তুখোড় বাম রাজনীতি করতাম।

অন্য রকম সময়। এখন পুরোটা বলতে পারব না। ওই

সময়ে আমি আমার যেসব বন্ধুকে ছেড়ে

এসেছি, নচিকেতা হওয়ার জন্য তারা আমার অনির্বাণ।

এটা আক্ষেপের গল্প বলতে পারেন।

হারানো দিনের আক্ষেপ।

রাজনীতিতে সচল ছিলেন। আবার কি

আসবেন?

না, আমার দর্শন সংসদীয় গণতন্ত্রের রাস্তায়

হতে পারে না। হুম, বলতে পারেন সুমনদা

গেছেন। আমি নিজেও তাঁর জন্য ক্যাম্পিং

করেছি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না যে এভাবে

আমাদের মুক্তি আসবে। আপনিই বলেন, একটা

পার্টি চলে কীভাবে? শিল্পপতির টাকায়। তাহলে

তো ভোটে জিতে তাঁদের জন্যই কাজ

করতে হবে। আর একটি কথা, পৃথিবীতে যদি

এই মুহূর্তে শান্তি আনতে চাও, তাহলে সব

রাজনীতিবিদকে মেরে ফেলতে হবে।

রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে কাজ করে বেশ

সমালোচিত হয়েছিলেন?

কিন্তু মানুষ তো গ্রহণ করেছে। আর বিতর্ক

তো হবেই। এসব নিয়ে চিন্তা করে লাভ

নেই। যখন মানুষ সময় থেকে এগিয়ে কথা

বলে, তখন বিতর্ক হয়। আমি অত কিছু চিন্তা করি না।

আমার কাছে আপাত সত্য যেটা মনে হয়, আমি

সেটা করি।

আপনার সংসারের কথা বলুন?

আমার একটি বউ, একটিই সন্তান। নাম ধানসিড়ি। সব

নিয়ে ভালোই আছি।

সন্তানকে গানের জগতে আনবেন?

কি জানি ঠিক বুঝতে পারছি না। কী করব

ভেবে পাই না। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারেই বা কী

হয়? আজকের যে মা-বাবারা

ছেলেমেয়েদের ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার

বানাতে চান, তাঁরা কি ডাক্তার হওয়ার পর

ছেলেমেয়েদের কখনো বলবেন,

চট্টগ্রামের ওই গাঁয়ে গিয়ে চিকিৎসাসেবা দাও।

তাঁরা ছেলেমেয়েদের নার্সিংহোমে

মোটা অঙ্কের টাকা কামানোর জন্যই ডাক্তার

বানাতে চান। সত্যিকার মানুষের যে বড়ই অভাব

রয়ে গেছে।

আপনি তো প্রেম করেই বিয়ে

করেছেন। ‘তুমি কি আমায় ভালোবাস’ গানে

প্রেমের প্রতি আপনার এত বিরাগ কেন?

আসলে মেয়েদের সব সময়

গ্লোরিয়াস করে ফেলি। সারাক্ষণ

মেয়েদের কাছে এর প্রশংসা। এই করব, সেই

করব…। আমার এসব ভালো লাগে না। অবশ্য আমার

চেহারা-শরীরের যে আকৃতি, তাতে

কোনো মেয়ে আমার দিকে ফিরে তাকাত

না। পাত্তা পেতাম না। তখন গাইলাম, ‘যদি না

ভালোবাসো তবে পরোয়া করি না…।’ ব্যস,

আমার মতো খারাপ চেহারার ছেলেদের

কাছে আমি আইকন হয়ে গেলাম। মজার ব্যাপার

হলো, মেয়েদের কাছেও প্রিয় হলাম।

আসলে মেয়েরাও ওই সব ছেলেকে

পছন্দ করে, যারা পাত্তা কম দেয়। (হাসি) আমার ওই

গান ছিল একটা কৌশল। কেননা, আমিও এই জাতির ওপর

দুর্বল!

সমসাময়িক অনেকেই মুম্বাই গিয়ে বেশ

ভালো করছে। নাম যশ, অর্থ…।আর আপনি ?

মুম্বাই নিয়ে আমার মোটেও আগ্রহ নেই।

মোটেও না। আমি তো এখানেই ভালো

আছি। হাততালির আওয়াজ তো সবখানে একই।

কলকাতায় আমি সবার বন্ধু। বিশ্বাস করেন, আমি

কোনো তারকা নই। এই যে এভাবে

সেন্ডেল পরে, বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে

হেঁটে বেড়াই, আড্ডা মারি। ভালোই তো

আছি। তা ছাড়া আমি খুব মুডি মানুষ। যখন ভালো লাগে

কাজ করি, যখন লাগে না তখন করি না। অত নিয়ম করে

চলি না।

চলচ্চিত্রে ইদানীং কোনো কাজ

করছেন না? ‘হঠাৎ বৃষ্টি’র গানগুলো দারুণ জনপ্রিয়

হয়েছিল।

ভাই, এখন এসব প্রেমের গান গাইতে

ইচ্ছে করে না। পুতুপুতু মার্কা প্রেমের গান।

সময়টা বড় অস্থির। এখন এসব গান মনে ধরে না

মোটেও। তাই ফিল্মে তেমন গাওয়া হয় না।

ধর্মতলা কোথায়? ২০১ ধর্মতলা?

একটা চোলাই মদের দোকান। বিস্তারিত না

বলাই ভালো।

‘বৃদ্ধাশ্রম’ গানটি নিয়ে আপনার নিজের কী

প্রতিক্রিয়া?

বাজে। আমি যে অর্থে গেয়েছি,

বাস্তবে হয়েছে তার উল্টোটি। মনে

হলো করেছি আমি। বৃদ্ধাশ্রমে আসুন সবাইÑএ

টাইপের কিছু! একটা মজার কথা শুনুন। গানটি গাইবার

কয়েক দিন পরে আমার এলাকার এক নেতা

আমাকে নিয়ে গেলেন একটি অনুষ্ঠানে।

গিয়ে দেখি একটি বৃদ্ধাশ্রমের উদ্বোধন। আমি

তো রেগে একাকার। ভেতরে ঢুকিনি। ওরা

বলে, দাদা, আসবেন না? আমি বলি, আসব। যেদিন

এই আশ্রম বন্ধ হবে, সেদিন আমি তালা মারব।

কলকাতায় এখন কারা ভালো করছে?

একমাত্র শুভমিতার গান আমার ভালো লাগে।

শুভমিতা আমার মেয়ের মতো। ওর মতো

গাইয়ে গত ৩০ বছরে এবং আগামী ৫০ বছরে

হবে না। এটা আমার উপলব্ধি। খুব স্ট্রাগল

করেছে মেয়েটি। পেইং গেস্ট

হিসেবে থাকত, রুটি খেয়ে দিন কাটত। আমি ওর

জন্য অনেক কষ্ট করেছি। ও আমার সম্মান

রেখেছে।

অবসরে কী করেন?

প্রিয় কাজ, আড্ডা মারা। আর বই পড়ি। সময়

পেলে আমি বই পড়ি। জীবনানন্দ, জয়

গোস্বামীর কবিতা পড়ি খুব।

নতুন কী করেছেন?

রবীন্দ্রনাথের গান করেছি। প্রায় শেষ।

তোলপাড় হবে বের হওয়ার পর।

আপনার পিতৃভিটা তো বাংলাদেশে?

হুম। বরিশালে আমার পিতৃ ও মাতৃভূমি। বরিশালের ভাণ্ডারিয়ায়। আমার দাদু ললিত মোহন গাঙ্গুলি ভাণ্ডারিয়ার একটা স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। ইচ্ছা ছিল এবার ভাণ্ডারিয়া যাব। একটু মাটি নিয়ে আসব। মা-বাবার স্মৃতি।দেখি কী হয়।

সৌজন্য : এলএ বাংলাটাইমস

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
22,500SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles