দীর্ঘ নীরবতা, ক্লান্তি, সম্পর্কের টানাপোড়েন আর অসুস্থতার ‘অন্ধকার’ পেরিয়ে ফিরে এসেছেন জাস্টিন বিবার। তবে এ ফেরা নিছক আরেকটি অ্যালবাম প্রকাশ নয়, এ এক নতুন ঘোষণা, নতুন প্রত্যয়। ৭ নম্বর স্টুডিও অ্যালবাম ‘সোয়্যাগ’ যেন তাঁর জীবনের নতুন অধ্যায়ের নাম।
১১ জুলাই হঠাৎ মুক্তি পেল ‘সোয়্যাগ’। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ভোরের বাতাসে ভেসে বেড়াতে লাগল বিবারের সংগীতে ফিরে আসার সুর। রেস্তোরাঁ ও ক্লাবে শোনা যায় বিবারের নতুন গান। যেদিকে যাই, শুনতে পাই বিবারের গান। বিবারের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে।
২০২২ সালে বহু প্রতীক্ষিত বিশ্ব সফরে বেরিয়ে পড়েন বিবার; কিন্তু ব্রাজিলে এক কনসার্টের পর হঠাৎ শারীরিক ক্লান্তির কথা জানিয়ে সফর স্থগিত করেন। এরপর একের পর এক প্রতিবন্ধকতা—দাম্পত্য সম্পর্কে টানাপোড়েন, দীর্ঘদিনের ম্যানেজার স্কুটার ব্রাউনের সঙ্গে বিচ্ছেদ, আর্থিক ক্ষতি এবং ঘন ঘন পাল্টে যাওয়া মেজাজ। ভক্তদের মনে প্রশ্ন উঠতে থাকে, তাহলে কি ফিরে এল পুরোনো আসক্তির ছায়া?
এর মধ্যেই আসে বড় এক পরিবর্তন। ২০২৪ সালের আগস্টে বিবার ও হেইলি তাঁদের প্রথম সন্তান জ্যাককে স্বাগত জানান। পিতৃত্ব তাঁর জীবনে যে নতুন আলো এনেছে, ‘সোয়্যাগ’-এর একাধিক গানে তার প্রতিফলন ফুটে উঠেছে। এ অ্যালবামের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হেইলি, তবে শুধু প্রেম নয়, আত্মোপলব্ধি, ক্লান্তি, ক্ষোভ আর পিতৃত্বের কোমলতা—সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক গভীর আত্মপ্রকাশের দলিল। ‘বাটারফ্লাইজ’ শিরোনামের একটি গানে লো-ফাই হাউস বিটের সঙ্গে শোনা যায় এক পাপারাজ্জির সঙ্গে বিবাদের আসল অডিও ক্লিপ, যেখানে তিনি রেগে বলেন, ‘তোমাদের টাকা চাই, মানুষের প্রতি কোনো সম্মান নেই!’
‘সোয়্যাগ’ শব্দটি হিপহপ সংস্কৃতি থেকে এসেছে—যার মানে আত্মবিশ্বাস, নিজস্বতা ও আভিজাত্য। বিবার এ শব্দকে শুধু স্টাইল নয়, একধরনের জীবনদর্শনের রূপ দিয়েছেন। এ অ্যালবামে যেমন তিনি ঘর ও ভালোবাসার অনুভব নিয়ে গান গেয়েছেন, তেমনি শিরোনাম গানসহ কয়েকটি গানে জানিয়ে দিয়েছেন, এখনো তিনি বিশ্বের শীর্ষ পপ তারকাদের একজন। সমালোচকেরা বলছেন, এটি তাঁর সবচেয়ে সুলিখিত ও আত্মাস্পর্শী অ্যালবামগুলোর একটি। ভক্তদের কণ্ঠে ঘুরছে একটি বাক্য, ‘তিনি যেমন ভালোবাসেন, তেমনই কাঁদান—এই বিবারকেই আমরা মিস করছিলাম।’
বলার অপেক্ষা রাখে না, অ্যালবামটি মুক্তির পরপরই বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, আইসল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে ও পর্তুগালে চার্টের শীর্ষে উঠে এসেছে। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, জাপান, নিউজিল্যান্ড, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে শীর্ষ দশে।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকেই অ্যালবামটি নিয়ে কাজ শুরু করেন বিবার। যদিও আগেই জানিয়েছিলেন, ২০২২ সালের মে মাসেই অ্যালবামের বড় একটি অংশ সম্পন্ন হয়েছে। এরপর ধীরে ধীরে অ্যালবামের উপস্থিতি টের পাওয়া যেতে থাকে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে স্টুডিওতে জ্যামিংয়ের ছবি পোস্ট করেন, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধজুড়ে ইনস্টাগ্রামে আসতে থাকে ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা। অবশেষে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আইসল্যান্ডে অ্যালবামের রেকর্ডিং শেষ করেন তিনি।
এরপর ১০ জুলাই হঠাৎ বিশ্বের নানা শহরে—রেইকিয়াভিক, লস অ্যাঞ্জেলেস, আটলান্টা, কেমব্রিজ ও অন্টারিওতে দেখা যায় ‘সোয়্যাগ’ লেখা রহস্যময় বিলবোর্ড। নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে উন্মোচিত হয় অ্যালবামের ২০টি গানের তালিকা। তার আগেই নিজের লস অ্যাঞ্জেলেসের বাড়িতে এক ঘরোয়া জ্যাম সেশনে বন্ধুদের সামনে শোনান অ্যালবামের কিছু অংশ।
এক জীবনের ভাঙা–গড়ার গল্প এ অ্যালবাম। সেই গল্পে রয়েছে ক্লান্তি, প্রেম, পিতৃত্ব, আত্মবিশ্বাস আর কিছুটা অভিমান। সব মিলিয়ে জাস্টিন বিবার যেন এবার তাঁর শ্রোতাদের উদ্দেশে বলছেন, ‘বিশ্বাস হারিয়ো না, আমি এখনো আছি।’ ব্যক্তিগত ঝড়ঝঞ্ঝা পার করে ফেরা এই জাস্টিন বিবার অনেক বেশি পরিণত ও আত্মবিশ্বাসী। কয় দিন সেটি থাকে দেখা যাক।